মাউস কি?

 মাউস (Mouse) হলো হাত দিয়ে নিয়ন্ত্রিত ইঁদুরের মতো দেখতে একটি জনপ্রিয় ইনপুট ডিভাইস (Device) একে পয়েন্টিং ডিভাইসও বলা হয়। এটি কীবোর্ডের নির্দেশ প্রদান ছাড়াই একটি কম্পিউটারকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। ১৯৬৩ সালে ডগলাস এঞ্জেলবার্ট মাউস আবিষ্কার করেন। ১৯৮৪ সালে মেকিন্টোশ কম্পিউটারে সর্বপ্রথম মাউস ব্যবহৃত হয়। মাউস সমতলে নাড়ালে মনিটরের পর্দায় একটি তীর বা হাতের মতো চিহ্ন নড়াচড়া করতে দেখা যায়। একে কার্সর বলে। মাউস নড়াচড়া করে ইচ্ছামত কার্সরকে স্থানান্তর করা যায়। এছাড়াও মাউসের সাহায্যে পর্দায় লিখিত বিষয়, গ্রাফ, ছবি ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণসহ আরাে নানা প্রকার কাজ করা যায়। একটি স্ট্যান্ডার্ড মাউসে দুটি বা তিনটি বাটন থাকে। সাধারণভাবে বাম পাশের বাটন ব্যবহার করা হয়। তবে ডান পাশের বাটনে কিছু অতিরিক্ত অপশন রয়েছে যা কিছু কিছু প্রােগ্রামে কাজ করার সময় ব্যবহার করা হয়। স্ক্রল বাটনযুক্ত মাউসের স্ক্রল বাটন ঘুরিয়ে মনিটরে প্রদর্শনযােগ্য পৃষ্ঠাকে উপরে বা নিচে করে সহজেই দেখা যায়।

 


মাউস কিভাবে কাজ করে? (How does a mouse work?)

মাউসের সাথে একটি এনকোডিং ডিস্ক থাকে। এই এনকোডিং ডিস্কে অনেকগুলি ছিদ্র থাকে এবং ডিস্কটির সামনে LED সেন্সর থাকে। ডিস্কটি ঘুরলে এই ইনফ্রারেড সেন্সরটি বুঝতে পারে মাউসটি কত জোরে কত দূরে সরছে। ইনফ্রারেড সেন্সর থেকে সংকেত মাউসের মাইক্রোপ্রসেসরে যায় এবং এই মাইক্রোপ্রসেসর সংকেতকে বাইনারি ডেটাতে পরিবর্তিত করে মাউস কানেক্টরের মাধ্যমে কম্পিউটারে পাঠায় এবং সে অনুযায়ী আউটপুট পাওয়া যায়।


মাউসের ব্যবহার (Use of Mouse)

1.                  পয়েন্টিং (Pointing) : মাউস পয়েন্টারকে মনিটর স্ক্রীনের যে কোন জায়গায় Move করানোকে পয়েন্টিং বলা হয়।


2.                  ক্লিক (Click) : মাউসের বাটন একবার ক্লিক করে ছেড়ে দেওয়াকে সিঙ্গেল ক্লিক বা শুধু ক্লিক বলা হয়। মাউসের বাটন পরপর দুইবার চাপ দেওয়াকে ডাবল ক্লিক বলা হয়।


ড্রাগ এন্ড ড্রপ (Drag & Drop) : কোন ছবি, আইকন বা উইন্ডোকে সিলেক্ট করে মাউসের বাম বাটন চেপে ধরে টেনে আনাকে ড্রাগ বা ড্রাগিং বলা হয়। যে বিষয়ে ড্রাগ করা দরকার সেটির উপর মাউস পয়েন্টার নিয়ে ক্লিক

1.                  করে সিলেক্ট করে মাউসের বাম বাটন চেপে ধরে যেখানে নেওয়া প্রয়ােজন সেখানে টেনে এনে মাউসের বোতাম ছেড়ে দিতে হবে। এভাবে ড্রাগ করে ছেড়ে দেওয়াকে ড্রপিং বা ড্রপ বলা হয়।

2.                  সিলেক্ট (Select) : কোন অবজেক্ট (টেক্সট/Drawing/Picture ইত্যাদি) সিলেক্ট করতে হলে অবজেক্টের ডান বা বামদিকে আই-বিম ক্লিক করে মাউসে চাপ রেখে অবজেক্টের উপর দিয়ে বাম বা ডনদিকে টেনে নিয়ে যেতে হবে। এতে টেনে নিয়ে যাওয়া অংশটুকুর উপর অন্য রঙের আচ্ছন পড়ে যাবে। রকম অবজেক্টের উপর দিয়ে অন্য রঙের আচ্ছাদন পড়ে যাওয়া বা হাইলাইটেড (Highlighted) হয়ে যাওয়াকেই সিলেক্টেড হওয়া বলা হয়।

মাউসের প্রকারভেদ (Types of Mouse)

মেকানিজমের উপর ভিত্তি করে কম্পিউটার মাউসকে বেশ টি ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলাে হলােঃ

1.                  মেকানিক্যাল মাউস (Mechanical Mouse)

2.                  অপটোমেকানিক্যাল মাউস (Optomechanical Mouse)

3.                  অপটিক্যাল মাউস (Optical Mouse)

4.                  ইনফ্রারেড বা রেডিও ফ্রিকুয়েন্সি কর্ডলেস মাউস (Infrared (IR) or Radio Frequency Cordless Mouse)

5.                  গেমিং মাউস (Gaming Mouse)

6.                  ট্র্যাকবল মাউস (Trackball Mouse)

7.                  স্টাইলাস মাউস (Stylus Mouse)

8.                  কর্ডলেস থ্রিডি মাউস (Cordless 3D Mouse)

9.                  টাচপ্যাড (Touchpad)

মেকানিক্যাল মাউস (Mechanical Mouse)
স্ক্রীনে কার্সরকে ঘুরানোর জন্য মেকানিক্যাল মাউসে একটি রবারের বল থাকে। মাউসের ভেতরে একটি সেন্সর থাকে যেটি বলের নড়াচড়াকে সনাক্ত এবং সেটিকে তথ্যে রূপান্তর করে যা কম্পিউটার অনুবাদ করতে পারে।

অপটোমেকানিক্যাল মাউস (Optomechanical Mouse)
ধরণের মাউসে একটি বল ব্যবহার করে মাউসের নড়াচড়া সনাক্ত হয় অপটিক্যাল উপায়ে।

অপটিক্যাল মাউস (Optical Mouse)
যে মাউসের বলের পরিবর্তে একটি অপটিক্যাল রশ্মি ব্যবহার করা হয় এবং মাউসটিকে কোন সমতলে নাড়ানোর ফলে স্ক্রীনে মাউস পয়েন্টার নড়াচড়া করে তাকে অপটিক্যাল মাউস বলে।

ইনফ্রারেড বা রেডিও ফ্রিকয়েন্সি কর্ডলেস মাউস (Infrared (IR) or Radio Frequency Cordless Mouse)
ধরণের মাউসের ক্ষেত্রে কম্পিউটারের মাউস পোর্টে লাগানো একটি বেস স্টেশনে (ওয়্যারলেস হাব যা একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্ককে সংযুক্ত করে) সিগন্যালকে রিলে করে থাকে।

গেমিং মাউস (Gaming Mouse)
ধরণের মাউসগুলােতে কাস্টোমাইজেবল বাটন থাকে। এতে প্রচুর ফিচার অন্তর্ভুক্ত থাকে।

ট্র্যাকবল মাউস (Trackball Mouse)
যে মাউসে একটি বল থাকে যা কোন সমতলের উপর নাড়ানোর ফলে স্ক্রীনে মাউস পয়েন্টার নড়া-চড়া করে তাকে ট্র্যাকবল মাউস বলে।

স্টাইলাস মাউস (Stylus Mouse)
ধরণের মাউস দেখতে কলমের মতো এবং বিশেষ একটি প্যাডের উপর এটি চালনা করে কাজ করতে হয়।

কর্ডলেস থ্রি-ডি মাউস (Cordless 3-D Mouse)
ধরণের মাউসগুলো দেখতে অনেকটা টিভি রিমােটের মতো এবং কম্পিউটার স্ক্রীনকে রিমোটলি পয়েন্টেড করা যায়।

টাচপ্যাড (Touchpad)
এগুলাতে সাধারণত ল্যাপটপে পাওয়া যায় যা প্রচলিত মাউসের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি একটি স্পর্শকাতর প্যাড দুটি বাটন নিয়ে গঠিত। বাটন দুটি মাউসের বাটনের মতো কাজ করে।

মাউসের কাজ (Function of Mouse)

·                     মাউসের সাহায্যে কম সময়ের মধ্যে গ্রাফিক্স ড্রইং করা সম্ভব।

·                     মাউসের সাহায্যে অপারেটিং সিস্টেমের সকল কাজ সম্পন্ন করা যায়।

·                     মাউসের সাহায্যে Windows-এর ডেস্কটপ থেকে সরাসরি প্রোগ্রামে প্রবেশ করা যায়।

·                     দ্রুত টাইপ সেটিংয়ের কাজ মাউস দ্বারা সহজে করা যায়।

·                     মাউসের সাহায্যে ফর্ম্যাটিংয়ের কাজ অনেক দ্রুত করা যায়।

·                     যে কোন সমস্যার ফলাফল দ্রুত কাগজে ছাপানোর জন্য মাউস উত্তম মাধ্যম হিসাবে কাজ করে।

·                     মাউস হাতের সাহায্যে ঘোরানো যায় বলে মনিটরে ঘুরে ঘুরে এর দ্বারা কাজ করা যায়।


Post a Comment

Previous Post Next Post